খুলনার বাজারগুলোয় সরকারি চাল বিক্রি দেখা যাছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো অভিযান বা ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বাজার কমিটি ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করছে চাল ব্যবসায়ীরা বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি খুলনার দৌলতপুর বাজারে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি চাল মজুদের বিষয়টি জানাজানি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতপুর তুলাপট্টির পাশে মেসার্স কাদের ট্রেডার্সে সরকারের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৪ হাজার বস্তা সরকারি চাল মজুদ রয়েছে। এইসব চাল সরকারি বস্তা থেকে খুলে জোড়া হরিণ মার্কা, নুরজাহানসহ বিভিন্ন নামের বস্তায় প্যাকেটিং করা হচ্ছে। শুধু কাদের ট্রেডার্স নয়, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, সিফাত এন্টারপ্রাইজসহ অনেকেই বিক্রি করে।
পার্শ্ববর্তী শাহাবুদ্দিনের চাল গোডাউনে মজুদ করা হয়েছে ঢাকা থেকে আনা রেশনের কয়েক টন চাল। এছাড়া মানিকতলা এলাকার সিফাত এন্টারপ্রাইজেও হাজার-হাজার বস্তা সরকারি চাল মজুদ রয়েছে। সংবাদ না করার জন্য এ সময় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনার সিএসডি গোডাউন থেকে সরকারি বরাদ্দ করা ৩৭০ মেট্রিকটন চাল নীলফামারির শামসুল হক অটো রাইস মিল কর্তৃপক্ষ বুঝে নেন। এরপর তারা খুলনার দৌলতপুরের কাদের টেডার্সকে ১৯০ মেট্রিকটন এবং সিফাত এন্টারপ্রাইজকে ১৮০ মেট্রিকটন চাল দেয়। এই ঘটনার পর কাদের টেডার্সের মালিক তার শ্রমিকদের নিয়ে সরকারি সাদা বস্তা থেকে চাল বের করে বিভিন্ন নামের ২৫ কেজি বস্তায় সেগুলো প্যাকেটিং করেন। পার্শ্ববর্তী চাল ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিনও সরকারি রেশনের চাল ঢাকা থেকে কিনে তার গোডাউনে মজুদ করে একই ভাবে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার পথে হাঁটছেন।কাদের টেডার্সের মালিক বলেন, নীলফামারির প্রতিষ্ঠানকে এই চাল ভিন্ন বস্তায় তারা সরবরাহ করবে। পাশাপাশি মরা ও নষ্ট চাল তারা বাছাই করবে। এই ধরণের চুক্তির বিনিময়ে তার গোডাউনে চাল মজুদ করা হয়েছে। তারা এই সরকারি চাল বিক্রি করে না। নীলফামারির প্রতিষ্ঠান কি করবে সেটা তারা জানে না। তারাও আরও বলেন, সকল ধরণের বৈধ কাগজপত্র তাদের কাছে আছে।
অপরদিকে আরেক ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জানান, তিনি ঢাকা থেকে রেশনের চাল কিনে এনেছেন। তার কাছে সকল কাগজপত্র আছে। তবে সরকারি চাল এভাবে কিনে ভিন্ন নামে বস্তায় বিক্রি করা অপরাধ কিনা জানতে চাইলে তিনি পরে দেখা করতে বলেন।
দৌলতপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নান্নু মোড়ল বলেন, আমরা শুনেছি বিষয়টি। আমরা চাল ব্যবসায়ীদের ডেকে বিষয়টির খোঁজ নিব। কোনো অন্যায় হলে অবশ্যই যথাপোযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, সরকারি চাল মজুদ করে সেই চাল ভিন্ন বস্তায় প্যাকেটিং করাটা অবৈধ। এমন কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই আমরা অভিযান করে ব্যবস্থা নিব।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, অনেক সময় রেশনের চাল সেনা, নৌ ও পুলিশ সদস্যরা বিক্রি করে দেন। যথাযথ কাগজ সংরক্ষণের মাধ্যমে সেই চাল সেভাবেই বাইরে বিক্রি করার নিয়ম। সরকারি বস্তা খুলে অন্য কোনো ব্রান্ডে বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments
Post a Comment