sayeed

কুয়েটের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি, দ্বি-মতের টানাপোড়েন

# শিক্ষার্থীদের আনন্দ মিছিল

# রাজনীতির আস্তানা, কুয়েটে হবে না

# অব্যাহতির সিদ্ধান্তে ন্যায়বিচারের পরাজয় হয়েছে: শিক্ষক সমিতি

# আমি পদত্যাগ করিনি : কুয়েটের উপ-উপাচার্য

প্রাণের খুলনা রিপোর্ট

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি মেনে নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল ৪ টায় ক্যাম্পাসে একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি কুয়েটের স্টুডেন্টস ওয়ালপেপার সেন্টার থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলি প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। এ সময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকা ও ফিলিস্তিনের পতাকা শোভা পাচ্ছিলো।

আনন্দ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। স্লোগানে তারা বলেন, রাজনীতির আস্তানা, কুয়েটে হবে না, শিক্ষা-সন্ত্রাস একসঙ্গে চলে না, জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, লেগেছে রে, লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, স্বৈরাচারের ঠিকানা এই কুয়েটে হবে না, ইনকিলাব, ইনকিলাব, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ।

মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে একটি প্রেস ব্রিফিং প্রদান করেন। প্রেস ব্রিফিং এ বক্তব্য প্রদান করেন, কুয়েটের টেক্সটাইল বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাহাতুল ইসলাম, ইইই বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ঝলক।

এ সময় বক্তারা হামলায় আহত শিক্ষার্থী, খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপনকারী শিক্ষার্থী, অনশনে অনাহারে থাকা শিক্ষার্থী, শিক্ষা উপদেষ্টা, ইউজিসির সদস্যসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই আনন্দ মিছিলে কুয়েটের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া চাপের মুখে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অব্যাহতির সিদ্ধান্তে ন্যায়বিচারের পরাজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‌‘আমরা চেয়েছিলাম একটা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। কিন্ত বর্তমান সময়ে যারা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের আন্দোলন করে আসছিল, আমরা দেখতে পাচ্ছি তারাই আজ অন্ধকার রাজনীতির করালগ্রাসে বন্দি। এ কারণে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে উদ্ভূত সংকট নিরসনে শিক্ষকদের কোনো চেষ্টায় সফল হয়নি।’

তারা বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ তাঁর পাঠানো প্রতিনিধিদল ও এক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। ফলে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া চাপের মুখে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অব্যহতির সিদ্ধান্তে মূলত ন্যায়বিচারের পরাজয় হয়েছে।


বিবৃতিতে তারা বলেন, গৌরবান্বিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দীর্ঘ আট মাস পরও যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন কার্যক্রম চলতে থাকে, তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় সমগ্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলতে পারে, যা নিয়ে শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা সব সময় সচেষ্ট থাকবে।


অপরদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম বলেছেন, আমি গতকাল রাত ১০টায় ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়েছি। তবে কোোন কাগজে স্বাক্ষর করিনি, এটা অব্যাহতি হতে পারে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করিনি বা আমাকে পদত্যাগ করতে বলাও হয়নি। আমাদেরকে যদি বলতো ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আপনাদেরকে পদত্যাগ করতেই হবে, এটাই একমাত্র সমাধান। তাহলে আমরা পদত্যাগ করতাম। আমি কোন পদত্যাগপত্র পাঠায়নি।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগপত্র করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শেখ শরীফুল আলম এ কথা জানিয়েছেন। পদত্যাগের বিষয়ে জানতে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।


উপ- উপাচার্য তিনি বলেন, ইউজিসির টিম গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন। বেশিরভাগ সময় ছাত্রদের সাথে কথা বলেছেন। আমার সাথে কথা বলেছেন বিকাল সাড়ে ৪ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। ১৮ ও ১৯ তারিখের ঘটনা বিষয়ে কথা হয়েছে।

তাদের কোন প্রশ্নই আমার কাছে মনে হয়নি যে আমার কোন একটা জায়গা থেকে ত্রুটি বা স্বচ্ছতা, নিষ্ঠার অভাব আছে। প্রতিষ্ঠান বা ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছি। তবে আমি বুঝতেই পারছি না যে আসলে আমার অপরাধটা কি ?


এর আগে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ শরীফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকগণের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।


বিষয়টি জানার পর অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা এবং অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুয়েটের উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম।


শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লেখা ওই চিঠিতে অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলম লিখিছেন, জুলাই ২০২৪ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখি। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর আমাকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। উপ-উপাচার্য পদে যোগদানের পর বিভিন্ন দাপ্তরিক সভা ও সিন্ডিকেটে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাকে কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে সহযোগিতা করেননি।


চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক উপ-উপাচার্যের সীমিত আকারে প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজ করার যে নীতিমালা ছিল তা গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে গত ৪ মাসে প্রশাসনিক কার্যাদি এবং আর্থিক বিলে স্বাক্ষর করতে না দিয়ে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদটি একটি অলংকারিক পদে পরিণত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে আমি শুধুমাত্র লাইব্রেরি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।


শেখ শরীফুল আলম উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে সর্বদা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করেছি। এ অবস্থায় গত রাতে প্রিন্ট/ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মারফত জানতে পারি সরকারের তরফে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাস্তবতা হলো আমি নিজে এখনও আমার অপরাধ সম্পর্কে জানি না এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত ন্যাক্কারজনক হামলার সময়ে ছাত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসী উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি এবং আমার শরীরে ২টি ঢিল/পাটকেল লাগে এবং ছাত্রদের সঙ্গে আমি নিজেও আহত হই। এ ব্যাপারে সাধারণ ছাত্রদের বক্তব্য নেওয়া যেতে পারে ও ঘটনার ফুটেজ দেখা যেতে পারে।


তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া এবং কোনো অপরাধ/অপকর্ম না করে অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুল বার্তা যাবে বলে মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি বা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

Comments

sayeed

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ