sayeed

কাঁচাপাট শর্তযুক্ত রপ্তানি পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিপাকে



পিকে রিপোর্ট

অংশীজনের সঙ্গে মতামত ছাড়া ও কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়া কাঁচাপাটকে শর্তযুক্ত রপ্তানি পণ্যের তালিকা করে পরিপত্র জারি করায় বিপাকে পড়েছেন খুলনার পাট রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে পাট রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা যেমন কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন, তেমনি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।


ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী লাভবান হলেও পাট খাত বিপর্যয়ে পড়বে। মৌসুমের শুরুতে পাটের দামে ধস নামায় কৃষকরাও পথে বসবেন।

পাট রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সরকার বিশেষ শর্ত ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কাঁচাপাট রপ্তানির পরিপত্র জারি করে। এতে করে পুরো পাটখাতের রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখবর ছড়িয়ে পড়তেই খুলনার দৌলতপুর কাঁচাপাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর উদ্যোগ দেখা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে তারা বৈদেশিক বাজার স্থায়ীভাবে হারানোর শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা আর কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন শ্রমিকরা। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও কাঁচা পাটকে শর্ত যুক্ত রপ্তানি পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।


শ্রমিকদের দাবি, এ সিদ্ধান্তের ফলে দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এই শিল্পেরসাথে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারাবে।


বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন ও পাট অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিদায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১২টি দেশে কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। এই ১২টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, তিউনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড। কিন্তু ভারত কাঁচাপাট আমদানি বন্ধ করার পর থেকে ১১টি দেশে পাট রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে ১১ মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিশ্বের ১১টি দেশে একহাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল পাট রপ্তানি হয়েছে।


অপরদিকে পাট রপ্তানি বন্ধ রয়েছে বেলজিয়াম, কিউবা, মিশর, এলসালভেদর, ইথিওপিয়া, জার্মানী, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালী, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, তানজানিয়া, জায়ার, রোমানিয়া ও ফিলিপাইনে।


রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০০ বেল পাট রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে আয় ছিল একহাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত একহাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের সাতলাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল পাট রপ্তানি হয়েছে।


দৌলতপুর জুট প্রেস এণ্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন খুলনা সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও তাঁর পরিবার দেশে পাটপণ্য উৎপাদনে ও রপ্তানির বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তাদের ও টোয়াইন মিল মালিকের অনৈতিক সুবিধা দিতে এই পরিপত্র জারির মাধ্যমে কাঁচাপাটের বাজারদরে ধস নামিয়ে মুনাফা লুটতে চায়। এতে বর্তমান পাট মৌসুমে কাঁচা পাটের দাম কমে যাবে। কৃষকরা পাটের দাম পাবে না। আর পাট খাতের জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ হারাবে।


এই শ্রমিক নেতা পাটশিল্প ও কৃষকদের বাঁচাতে অবিলম্বের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পাট রপ্তানিকারক জানান, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ মাছ, সুগন্ধী চাল রপ্তানির মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। যা ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনা ও হয়রানি সৃষ্টি করবে। ফলে তারা রপ্তানির উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। আবার রপ্তানি কমলে কাঁচাপাটের দাম কমবে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এই সুযোগে সিল্ডিকেট তাদের স্বার্থ হাসিল করবে।


বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য গাজী শরীফুল ইসলাম অহিদ বলেন, পরিপত্র জারির পর থেকে পাট রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কাস্টমস ক্লিয়ারিংয়ের সাইড বন্ধ, বন্দরে বা পথে যেখানে যে অবস্থায় পাট রপ্তানির অপেক্ষায় সেসব শিপমেন্ট করা যাচ্ছে না। বন্দরে আটকা পড়েছে পণ্য। কোথায় বিশেষ অনুমতি, কী শর্ত কোন কিছুই স্পষ্ট নয়।


প্রাণের খুলনা / এম এন আলী শিপলু

Comments

sayeed

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ